উপসর্গহীন আক্রান্তদের
বাড়িতে রাখলে
কি ডেকে আনবে অন্য বিপদ?
মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য
একা রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসর!
দেশে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই অবস্থায় উপসর্গহীন অথবা মৃদু উপসর্গ থাকা করোনা আক্রান্তদের বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ বাড়তি বিপদ ডেকে আনতে পারে বলেই আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য এবং ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মত, দেশবাসীর দায়বদ্ধতার উপর চোখ বন্ধ করে ভরসার ফল হিতে বিপরীত হয়ে বাড়িয়ে দিতে পারে গোষ্ঠী সংক্রমণের হার।
একজন আক্রান্তের খোঁজ মিলতেই তড়িঘড়ি তাঁর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে স্বাস্থ্য দপ্তরের নজরদারিতে কোয়ারান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে গত কয়েক মাসে। করোনার সংক্রমণকে খুব বেশি ছড়িয়ে দেওয়া থেকে ঠেকাতে কড়াকড়ির সেই কোয়ারান্টিন যে কাজে এসেছে, তার প্রমাণ দিচ্ছে রাজ্যের কিছু পরিসংখ্যানও। দেখা গিয়েছে, রাজ্যে টেস্ট সংখ্যা একলাফে অনেকটা বাড়লেও সে তুলনায় বৃদ্ধি পায়নি আক্রান্তের সংখ্যা। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাও জানিয়েছেন, রাজ্যের পজিটিভ কনফার্মেশন রেট কমে এসেছে ৪.৬ শতাংশে। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তার কথায়, 'সম্ভবত কোয়ারান্টিন ঠিকমতো মেনে চলারই ফল মিলছে এখন।'
গত কয়েক সপ্তাহের লকডাউনে বহু মানুষই রাস্তায় বেরিয়েছেন নানা ছুতোনাতায়। এই অবস্থায় করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি এমনকী, মৃদু উপসর্গ থাকা করোনা আক্রান্তদেরও বাড়িতে থাকার 'ছাড়' দিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে কি না, তা ভেবেই আশঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। দেশের নামজাদা ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ টি জেকব জন বলছেন, 'এটা ঠিকই যে হাসপাতালগুলো ধীরে ধীরে ক্লাস্টারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। করোনার উপসর্গ আছে, অথচ করোনার সংক্রমণ হয়নি এমন মানুষও হাসপাতালে ভর্তি থাকলে তাঁর সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ফলে তাঁরা বাড়িতে থাকলে সে সংক্রমণ এক অর্থে কম ছড়াবে, সেটা ঠিক। কিন্তু, এত বিপুল সংখ্যক জনঘনত্বের দেশে সেটা নিশ্চিত করাটাই তো চ্যালেঞ্জের।'
দেশের অন্যতম নামজাদা আইসিএমআর প্রতিষ্ঠান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজির গবেষক তরুণ ভাটনগর মনে করছেন, বাড়িতে রেখেই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার সিদ্ধান্ত একটু বেশিই তাড়াতাড়ি নিয়ে ফেলেছে কেন্দ্র। তিনি বলেন, 'দেশের এখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যেখানে করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা যাবে না। পাশাপাশি, বাড়িতে আইসোলেশন বা কোয়ারান্টিনে থাকার জন্য যতই নিয়ম করা হোক না কেন, তা কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে তুলনীয় নয়। বাড়িতে থাকলে নিয়ম ভাঙাটা অনেক সহজ।' তাঁর মতে, 'ঘরে রেখে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্তটা একটু আগেই নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভারত এখনও আক্রান্তের নিরিখে সর্বোচ্চ সংখ্যা বা পিক-এ ওঠেনি এখনও। লকডাউন শিথিল হলে মানুষের আনাগোনা বাড়লে আরও বহু মানুষ এমনিতেই আক্রান্ত হবেন।'
দেশবাসীর এই 'নিয়ম ভাঙা'র প্রবণতাকেই ভয় পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। মলিকিউলার ভাইরোলজিস্ট পার্থসারথী রায়ের কথায়, 'আমরা জানি, প্রচুর মানুষ উপসর্গবিহীন হয়ে এই মুহূর্তে সরকারের নজরদারির বাইরে রয়েছেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাঁরা আরও বেশি করে চেপে যাবেন নিজেদের রোগের কথা। এবং যদি তাঁরা আইসোলেশনের নিয়ম না-মেনে ঘুরে বেড়ান, তা হলে সরকারের অলক্ষ্যে এ রাজ্যের জনঘনত্ব বিচার করলে অবধারিত ভাবেই বিপুল মানুষ আক্রান্ত হবেন করোনায়।' তরুণ বলছেন, 'একটা প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন মানুষ নিয়ম মানছেন কি না, আর ১০০ জন মানুষ ১০০টা জায়গায় বসে নিয়ম মানছেন কি না, তা বোঝার জন্য অনেক বেশি পরিমাণ নজরদারির প্রয়োজন। আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন, সে রকম নজরদারি চালানোর পরিকাঠামো আমাদের আছে কি না।'
একধার থেকে বিপুল সংখ্যক উপসর্গহীন অথবা মৃদু উপসর্গ থাকা করোনা আক্রান্ত অথবা আক্রান্তের প্রাইমারি কনট্যাক্টদের বাড়িতে থাকার অনুমতি দিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরেরও। দপ্তরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, 'আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, সবদিক খতিয়ে দেখে সেই ব্যক্তি আইসোলেশন মেনে চলার যোগ্য কি না নিশ্চিত না-হলে কোনও ভাবেই বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না।'
Posted By
Shifat Ara Naznin
Bdcare is the first and largest innovative online healthcare startup, built with a mission to create a “one-stop” healthcare platform for Doctors & Patients...
Explore more