বছর দশেক আগে নিজের কাকাকে দেখেছিলেন প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে। তখন কাকার বয়স ৬১। অবসরের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী ভাইপোও কয়েক মাস আগে একই রোগের শিকার হয়েছেন। চিকিৎসক অবশ্য তাঁকে অভয় দিয়েছেন। যুগান্তকারী একটি নতুন ওষুধ এখন মিলছে দেশীয় বাজারেও। তাই চিন্তা নেই। এখন নিরাময় সম্ভব ষোলো আনাই।
নিজে বেঁচে গেলেও সহকর্মীকে অবশ্য বহু বুঝিয়েও তিনি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। তলপেটে মারাত্মক যন্ত্রণা সইতে না-পেরে সেই সহকর্মী যখন ডাক্তারবাবুর কাছে যেতে বাধ্য হন, ততদিনে প্রস্টেট থেকে ক্যান্সার ছড়িয়েছে অভ্যন্তরীণ নানা অঙ্গে। অর্থাৎ, মেটাস্টেসিস। আত্মীয়দের চিকিৎসক জানিয়ে দেন, দিন ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ।
বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ, প্রস্টেট ক্যান্সার নিয়ে এত সচেতনতামূলক প্রচারের পরেও স্রেফ অবহেলা, গড়িমসি আর দেরির কারণে অসংখ্য মৃত্যু এড়ানো যাচ্ছে না এখনও। গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ফি বছর প্রায় ২৬ হাজার পুরুষ প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ভারতে। গড়ে প্রায় ১৭ হাজার মারাও যান। এবং তা মূলত সময়োচিত চিকিৎসার অভাবেই। বাংলাও ব্যতিক্রম নয়। অথচ প্রস্টেট ক্যান্সারের সন্তোষজনক চিকিৎসা বেশ কয়েক বছর ধরেই রয়েছে। কয়েক মাস হল এনজালুটামাইড নামের একটি যুগান্তকারী ওষুধ সেই তালিকায় নতুন সংযোজন, যা প্রস্টেট ক্যান্সারে মৃত্যুহার তাৎপর্যপূর্ণ হারে কমাতে সক্ষম। কিন্তু সুফল যে প্রত্যাশিত হারে মিলছে না, তার জন্য সচেতনতার অভাবকেই বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন পুরুষদের স্বাস্থ্য সচেতনার (মূলত প্রস্টেট ক্যান্সার) জন্য উৎসর্গীকৃত নভেম্বর শেষের প্রাক্কালে।
প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন বা পিএসএ নামের একটি সাধারণ রক্তপরীক্ষায় সহজেই আন্দাজ মেলে, সংশ্লিষ্ট পুরুষের প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কতটা। কিন্তু পঞ্চাশোর্ধদের মধ্যে হাতেগোনা পুরুষই নিয়মিত এই স্ক্রিনিং করান। বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ, রক্তপাত কিংবা যন্ত্রণার মতো প্রস্টেট ক্যান্সারের উপসর্গ কবে প্রবল ভাবে মাথাচাড়া দেবে, তার জন্য এখনও মানুষ অপেক্ষা করেন। অথচ লোকে বোঝে না, প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের এই কর্কটরোগ থাবা চওড়া করে চুপিসাড়ে। মূত্ররোগ বিশেষজ্ঞ অভয় কুমার বলেন, 'পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ঝুঁকি। বিশেষ করে ৫০-এর পর। দুনিয়ার বিভিন্ন শহরে করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সত্তরোর্ধদের মধ্যে শহর-বিশেষে ৩১-৮৩% পুরুষ প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও লক্ষণ-উপসর্গ প্রকট ভাবে দেখা যায় না বলে গোড়ায় কেউ গুরুত্ব দেয় না।'
মূত্ররোগ বিশেষজ্ঞ বাস্তব ঘোষ বলেন, 'সব রকম প্রস্টেট ক্যান্সারের মধ্যে সিআরপিসি (ক্যাস্ট্রেট রেজিস্ট্যান্ট প্রস্টেট ক্যান্সার) গোত্রের অসুখটাই সবচেয়ে বেয়াড়া। তা সামলাতে গেলে বরাবর যে সব ওষুধ দেওয়া হত, তাতে প্রভূত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু মাস ছয়েক হল এনজালুটামাইড গোত্রের কয়েকটি ওষুধ ভারতীয় বাজারেও মিলছে, যা দারুণ কাজে লাগে চিকিৎসায়। এই ওষুধ প্রস্টেট ক্যান্সার কোষগুলির মূল খাদ্য যে টেস্টোস্টেরন হরমোন, তার উৎপাদনই বন্ধ করে দেয়। ফলে সহজেই বাগে আসে ক্যান্সার।' কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা, এত ভালো একটি ওষুধের সুফল খুব কম রোগীই পান। কারণ, অধিকাংশ রোগীই এত দেরিতে আসেন যে এনজালুটামাইড প্রয়োগেও খুব লাভ হয় না।
ন্যাশনাল মেডিক্যালের মূত্ররোগ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসক দিলীপ কর্মকারের তাই পরামর্শ, 'বয়স ৫০ পেরোলেই বছরে বা দু'বছরে অন্তত একবার পিএসএ স্ক্রিনিং করানো উচিত সব পুরুষের। যদি পিএসএ ৪ বা তার বেশি হয়, তা হলে কোনও লক্ষণ-উপসর্গ থাক বা না-থাক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। যদি দেখা যায়, প্রস্টেট ক্যান্সার নেই অথচ পিএসএ রিডিং ৪-এর বেশিই থাকছে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বছরে দু'বারও পিএসএ পরীক্ষা করাতে হতে পারে।' তিনি জানান, আজকাল প্রস্টেট ক্যান্সারের এত ভালো চিকিৎসা আছে যে রোগটা তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে ১০০% রোগীর ক্ষেত্রেই ক্যান্সারমুক্তি সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না স্রেফ দেরির কারণে।
\Bপ্রস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ \B
* মূত্রত্যাগে জ্বালা
* প্রস্রাব শুরু বা বন্ধে অসুবিধা
* রাতে বার বার মূত্রত্যাগের বেগ
* মূত্রথলির উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো
* প্রস্রাবের ধারা/গতি কমে যাওয়া
* প্রস্রাবে রক্ত বা হেমাচুরিয়া
* বীর্যের মধ্যে রক্ত
* বীর্যপাতের সময়ে যন্ত্রণা
Posted By
Dr Absar
Bdcare is the first and largest innovative online healthcare startup, built with a mission to create a “one-stop” healthcare platform for Doctors & Patients...
Explore more